সাধারণভাবে বন্ধ্যাত্ব হচ্ছে গর্ভধারনে অক্ষমতা ; এটা একটি ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী সমস্যা

সাধারণভাবে বন্ধ্যাত্ব হচ্ছে গর্ভধারনে  অক্ষমতা ; এটা একটি ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী সমস্যা , এক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ % দম্পতিরা অনুর্বর হয় , বন্ধ্যাত্ব একটি সমস্যা l এটি রোগ নয় l এক অংশীদার বা উভয় অংশীদারদের মধ্যে কিছু সমস্যার কারণে ঘটে , ২০% ক্ষেত্রেই ইহা অব্যাখ্যাত l প্রাচীন যুগ থেকে ২১ শতকেও বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধারণা বিরাজমান যা দূর করা প্রয়োজন –

যদিও, অনেক ঝুঁকি ও কারণ উভয় অংশীদারদের প্রায় সমানভাবে বন্ধ্যাত্বর জন্য দায়ী,কিন্তু দুঃখের বিষয় শুধুই মহিলা অংশীদারদের দায়ী করা হয় l এমনকি দেশের অন্যান্য সুনাগরিকদের এবং  পরিবারের প্রায় সকল সদস্যদের দ্বারা উপেক্ষিত ও নিগৃহীত  হয় ! চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলো তাদের দরজায় এখনো পৌঁছায় নাই !

বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধারণা থেকে  কিছু লোক বলে – জন্মগতভাবে এটা একটা অভিশাপ i অনেকে বিশ্বাস করেন যে যাত্রা  নিরর্থক হবে যদি বন্ধ্যা দম্পতির সঙ্গে মুখোমুখি হয় l  উভয় পরিবার ও সমাজের পাশাপাশি অবহেলিত হয় বন্ধ্যা দম্পতি – কোনো উৎসব / অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুমতি দেওয়া হয় না, অনেকে বন্ধ্যা দম্পতির কোলে তাদের শিশুদের দিতে চাই না l উর্বর দম্পতিরা  তাদের Baja (বন্ধ্যা), atkura (অশুভ) এবং অলক্ষ্যনে ইত্যাদি বলতেও কুণ্ঠিত হয় না i বন্ধ্যা মহিলা সহযোগীদের মানসিক ও ৈদহিক নির্যাতন সহ  তালাকপ্রাপ্তও হতে হয় l বন্ধ্যা দম্পতিদের পুরুষ অংশীদারদেরা তাদের রেখেই অন্য নারীদের পুনর্বিবাহ করে ও পূর্ববর্তী নারীদের  দায়িত্বও পালন করে না l বন্ধ্যা নারীদের বিরুদ্ধে অনুযোগ বা অভিযোগ বন্ধ করা উচিৎ l অনেক নারীই তাদের তীব্রভাবে সমালোচনা করে ও তাদের জীবন বিষন্নতায় ভরে দেয় l এখন  কেউ কেউ পরামর্শ বা চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে  প্রত্যাবর্তন করছেন l  বাংলাদেশের অনেক বন্ধ্যা দম্পতির  অজ্ঞতা, দারিদ্র্যতা ও কম বন্ধ্যাত্ব কেন্দ্রের অভাবে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে l আবার অনেকে বন্ধ্যাত্ব -এর কারণ বা ঝুঁকি নির্ণয়ের বিষয়গুলি, টেস্টিং বা চিকিৎসা সম্পর্কেও জানে না l

বেশির ভাগ বন্ধ্যা দম্পতিরাই এখনও উদ্ভিদ দ্বারা গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার, কবিরাজ , ফকির বা পীর – দরবেশ দ্বারা নীতিহীন চিকিৎসা নেন l  এমনকি জাদু বা গিটযুক্ত সুতা , পানি পড়া ,ঝাড়- ফুঁককে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করে l কিছু অনুর্বর চিন্তাকারী আল্লাহর কাছে দোয়া করে , কেউ মনে করে যে এটা সর্বশক্তিমান খোদার ইচছা ও পরিণামে এই অন্ধবিশ্বাস থেকে তারা কোনো সঠিক চিকিৎসা নিতেও নারাজ l তারা মনে করে তাদের ভাগ্যে  কোন সন্তান নাই l তারা বিষণ্নতা ও অবহেলার  খারাপ অনুভূতিকে সঙ্গে নিয়েই জীবনের শেষ সীমানায় পাড়ি দেয় l

একজন সভ্য ও চিকিৎসা সচেতন নাগরিক হিসেবে দায়ীত্ব হলো বিজ্ঞানসম্মত ঝুঁকিমুক্ত আধুনিক বন্ধ্যাত্ব টেস্টিং ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে যথাযথ পরামর্শ প্রদান করা l উত্তম বন্ধ্যাত্ব সেন্টার সনাক্ত করে তাদের অবহিত করা অতীব জরুরি l দুর্ভাগ্যবশত, এখন পর্যন্ত বন্ধ্যাত্ব সেন্টারগুলো প্রাইভেট সেক্টর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে l আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় বন্ধ্যাত্ব সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি l বর্তমানে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা যথোপযুক্ত , সহজলভ্য এবং  ঝুঁকিহীন l কাজেই বন্ধ্যাত্বকে ভয় করার কোন কারণ বা প্রয়োজন নাই l

সন্তান প্রত্যাশী বন্ধ্যা দম্পতির কল্যাণের জন্য সরকার ও বেসরকারি সংস্থা অনতিবিলম্বে কার্যকর পর্যাপ্ত সংখ্যক বন্ধ্যাত্ব সেন্টার স্থাপন ও চালু করার জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে l  ফলতঃ বন্ধ্যা দম্পতিদের আর উপেক্ষিত হতে হবে না — এটাই হোক সকলের প্রত্যাশা।

ডাঃ নুরজাহান বেগম

সহযোগী অধ্যাপক (বন্ধ্যাত্ব ও প্রজনন)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়