গর্ভাবস্থায় .প্রসবের সময় এবং প্রসব পরবর্তীতে মেয়েদের শরীরে রক্ত পরিসঞ্চালন এড়াতে জেনে নিন রক্তস্বল্পতার কারন ও সমাধান এবং প্রতিরোধ :

গর্ভাবস্থায় .প্রসবের  সময়  এবং  প্রসব  পরবর্তীতে মেয়েদের  শরীরে  রক্ত  পরিসঞ্চালন এড়াতে  জেনে  নিন  রক্তস্বল্পতার  কারন  ও সমাধান  এবং  প্রতিরোধ :

রক্তস্বল্পতা/’রক্তশূন্যতা (Anaemia)                                                                                           কি ?

বিস্বসাস্থ্য  সংস্থা  মতে  শরীরে প্রতি  ডেসিলিটা র রক্তে  হেমোগ্লোবিনের  মাত্রা  ১১ গ্রাম  এর  কমই  হচ্ছে রক্তস্বল্পতা ।

হেমোগ্লোবিন কোথায়  থাকে ?

 রক্তের  লোহিত  কণিকার  মধ্যে  থাকে ।

হেমোগ্লোবিনের কাজ কি ?

হেমোগ্লোবিন শরীরের  প্রতিটি  টিসুতে  অক্সিজেন সরবরাহ  করে  সক্রিয়  ও সতেজ  রাখে ।

হেমোগ্লোবিনে কি  কি  উপাদান  থাকে ?

আয়রন .

ফলিক  এসিড

ভিটামিন  বি ১২

আমিষ (প্রোটিন)

 উপোরোক্তো  উপাদানের  যে  কোন  একটির  ঘাটতি  হলে রক্তস্বল্পতা হয় ।

গর্ভাবস্থায়  মেয়েদের রক্তস্বল্পতার  অন্যান্য  কারনগুলো  কি কি ?

গর্ভের  সময়  হেমোগ্লোবিনের চাহিদা বৃদ্ধি  গর্ভস্থ  সন্তানের  সুস্ঠু  গঠনের  এবং  নিজের  শরীরে  বিভিন্ন  পরিবর্তনের  মোকাবেলায় ।

 গর্ভে জমজ   বা  একাধিক  সন্তান  ধারন

ঘন  ঘন  গর্ভধারণ (৩ বছরের  মধ্যে )

শৈশব  বা  কিশোর  থেকে  রক্তস্বল্পতাই  ভুগা

কৃমির সংক্রোমন

পেপটিক  আলসার -এই  রোগে  একটু  একটু  করে  রক্ত  কমতে  থাকে ; ব্যথানাশক  মেডিসিন  সেবনের  ফলে  আলসারের  আকার  বাড়ে  এবং শরীরের   রক্তও  কমতে  থাকে

পাইলস

 গর্ভপাত

গর্ভফুলের  অবস্থান  জরায়ুর  নিচে

হলে(Placenta  praevia)   প্রচুর রক্তক্ষরন  হয় -যা  জীবনের   নাশের  ঝুঁকি ।

গর্ভফুলের  জরায়ু  থেকে  আলাদা (Abruptio Placentae) হওয়া -এহেনো  অবস্থাতেও  রক্তক্ষরন  হয় যা  অনেক  সময়  বাহির  থেকে  বুঝো  যায়না বলে  রোগী  রক্তস্বল্পতার  জন্য রোগী  অজ্ঞান   হন ।

জরায়ুতে  টিউমার (ফাইব্রোয়েড ) থাকলে  প্রসবকালে এবং  প্রসব  পরবর্তীতে  রক্তক্ষরন  হয়

গর্ভবতী  আগে থেকেই  রক্তজনিত  সমস্যায়  ভুগলে-যেমন  থ্যালাসেমিয়া  সিকিল  সেল ডিজিজ ।

ঘন  ঘন  UTI(প্রস্রাবতন্ত্রের  ইনফেকশন ); শুনলে  অবাক  হবেন যে  ইনফেকশন  হলে  রক্তকনিকা  ভেংগে  যায় ।

উপসর্গ :

অত্যধিক  দূর্বলতা / ক্লান্তি  অনুভব

সামান্য  পরিশ্রমে  হাঁপিয়ে  উঠা

খাবারে  অরুচি /ক্ষুধামন্দা

 চোখ – মুখ   বা  শরীর  ফ্যাকাসে  হওয়া

জিহ্বা  ও  মুখের  কোনায়  ঘা  হওয়া

 বুক  ধড়ফড় করা / হৃদস্পন্দন  বেড়ে  যাওয়া

স্বাসকস্ট  হওয়া

শরীরে  পানি  আসা

কানে  ঝি  ঝি  শব্দ  শোনা

রক্তচাপ  কমে  যাওয়া

হজমে অসুবিধা

এক  নিঃস্বাসে  কথা  শেষ  করতে  না  পারা

ভঙ্গুর  নখ

নখের  আকৃতি  চামচের  মতো

ক্ষতিকর  প্রভাব :

বাচ্চার –

কম  বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বেবি  হয়  ।

 বাচ্চার শারীরিক  ও মানসিক  গঠনে  ত্রুটি   থাকে

কম  ওজোনের  ও হাবা -গোবা  বাচ্চাজন্ম  নেই।

মা :

গর্ভাবস্থায় .প্রসবের  সময় ও প্রসব  পরবর্তীতে  রক্তক্ষরনের  ঝুঁকি  বেড়ে  যায় ।

হার্ট  এ্যাটাক  এর  ঝুঁকি  থাকে।

বিভিন্ন  ধরনের  ইনফেকশন  হতেই  থাকে ; বিশেষ  করে  স্বাসতন্ত্র .মূত্রতন্ত্র ও প্রজননতন্ত্রের  প্রদাহ ।

    স্তনে  দুধও  আসেনা (lactation )

 গর্ভপাত  হয়

নির্ধারিত সময়ের  আগে  প্রসব  হয় ।

মৃত সন্তান  প্রসব

দেরিতে  ঘা  শূকাবে

শরীরে  রক্ত পরিসঞ্চালনের  দরকার  পড়ে

প্রতিরোধ :

শৈশব  ও  কিশোর থেকেই আয়রণ  ও পুস্টিমান  সমৃদ্ধ  খাবার  খেতে  হবে ।

পিরিয়ডের  সময়  বেশি  রক্তক্ষরন  এর  কারন  ও চিকিৎসা  করতে  হবে ।

গর্ভের  পরিকল্পনার  আগেই  প্রসূতি  বিশেষজ্ঞকে  দেখায়ে  হেমোগ্লোবিননের  মাত্রা  নিরাপদ  লেভেলে  আনতে  হবে ।

রক্তজনিত  রোগ  নির্নয়  করে  চিকিৎসা  নিতে  হবে

[  ]কৃমিনাশক  মেডিসিন  সেবন  করতে  হবে  গর্ভধারণের আগে ।

[  ]পাদুকা  পরিধান  করতে  হবে — কৃমি  সংক্রামোন  এড়াতে ।

[  ]সবজি  ও ফল  ভালো  করে  ধুয়ে –যাতে  কৃমির  ডিম  না  পেটে ; যায়  মাছ  মাংস  সিদ্ধ  করে  খেতে  করে  খেতে  হবে  একই  কারনে ।

গর্ভাবস্থায়  বার  বার  হেমোগ্লোবিননের মাত্রা  চেক করতে  হবে

দৈনিক আয়রণ. .আমিষ ও .ভিটামিন (কলিজা  সবজি  ফল )  সমৃদ্ধ  খাবার   খেতে  হবে

ডাক্তারের  পরামর্শে  আয়রণ বড়ি  খেতে  হবে

আয়রণ ইনজেকশন  ও নিতে  হতে  পারে ।

চিকিৎসা :

রক্তস্বল্পতার  মাত্রা  অনুযায়ী  আয়রণ ইনজেকশন  বা  শরীরে  রক্ত পরিসঞ্চালন করতে  হবে  চিকিৎসাকের  পরামর্শ  এ

ডাঃ নুরজাহান বেগম

সহযোগী অধ্যাপক (বন্ধ্যাত্ব ও প্রজনন)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়